জমি বিক্রির ০৬ (ছয়) হাজার টাকা দিয়েও মেলেনি মানসিক প্রতিবন্ধীর স্ত্রীর ভিজিডি কার্ড
- প্রকাশিত : ১০:০১:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ১০৬৫ বার পঠিত
মোঃ সুরুজ্জামান (ভূঞাপুর) টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ভারই গ্রামের মোছাঃ আকলিমা বেগম, স্থানীয় মৃত হোসেন আলী ভলানটিয়ারের বড় পুত্র মোঃ জামাল হোসেন নামে এক নেতার নিকট নগদ ছয় হাজার টাকা দিয়েও পাননি ভিজিডি কার্ডের বই।
উল্লেখ্য যে, গত নভেম্বর মাসে ভূঞাপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস হতে নির্দেশ আসে ভিজিডি চাউলের কার্ডের জন্য অনলাইনে ইউনিয়নবাসীদের আবেদন করার। আবেদনকারীর নাম, ফোন নং, যে বাড়ীতে থাকে- কাচা না পাকা তা, পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছে কিনা, বাড়ি কিসের তৈরী- টিন না, বিল্ডিং, বাড়িতে বিদ্যুত ব্যবহৃত হয় কিনা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত, আবেদনকারীর পরিবারে প্রতিবন্ধী সদস্য আছে কিনা, স্কুলে পড়ৃয়া কতজন, জমি ৫ শতাংশের উর্ধ্বে কিনা নিম্নে আছে কিনা ইত্যাদি অনলাইনে উপযুক্ত তথ্য, জাতীয় ভোটার আইডি দিয়ে আবেদন করা হয়।
ভূক্তভোগী ও অন্যন্যা সূত্রে জানা যায় যে, গত ১৮/০২/২০২১ ইং তারিখ রোজ বৃহঃবার অফিস সময়ে আকলিমা বেগম ৫নং অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে তার নামে কোন নতুন ভিজিডি কার্ডের বই দেখতে পান না। এজন্য জামাল হোসেনের নিকট তিনি ফোনে কথা বলেন। জামাল হোসেন তাকে বলেন, আমি দেখতেছি। ভূক্তভোগী কারো কাছ হতে সঠিক জবাব না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে তিনি তার ঝায়ের (দেবরের বউ) নিকট বিষয়টি বলেন। পরে তার ঝায় (দেবরের বউ) তথ্য নিতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তাকেও জামাল হোসেন জানান, আমি দেখতেছি। এসময় রফিক নামে একজন বলেন, তালিকায় নাম নাই কেন বিরক্ত করেন। পরে তার ঝা (দেবরের বউ) ৫নং অলোয়া ইউনিয়নের সচিব মাহবুবুর আলম সুজনের কক্ষে যান সেখানেও সচিব সাহেব বলেন, আকলিমা বেগম, স্বামী নজরুল ইসলাম নামে কোন ভিজিডি কার্ডের বইয়ের তালিকায় নাম নাই। এর পর (দেবরের বউ) শাহিদা বেগমকে চেয়ারম্যান সাহেবের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানেও আকলিমা বেগমের কোন লিষ্টে নাম পান নি। এদিকে এসময় জামাল হোসেন কোথায় যেন কাকে ফোন করেন কিন্তু ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকায় সেখানেও তার নাম দেখতে পাওয়া যায় নাই বলে জানা যায়। ফলে তারা হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোছাঃ আকলিমা বেগম দুই কন্যা, এক ছোট শিশু ছেলে(৩) সন্তান নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ভারই-তে পুরাতন ভাঙ্গা টিনের এক ঘরে বসবাস করেন। তার বড় মেয়ে, গত বছর নাজামা আক্তার নুপুর(১৫) জে এস সি পরিক্ষা দিয়েছে , ছোট মেয়ে নিশি (১২) ৫ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে পরিবারটি চলে।
জানা যায়, ২০ বছর পূর্বে ভারই গ্রামের মৃত মুক্তার আলীর বড় ছেলে মোঃ নজরুল ইসলামের সাথে মোছাঃ আকলিমার বিবাহ হয়। বিবাহ পরবর্তীতে নজরুল ইসলাম সংসারের কাজকর্ম ঠিক মতোই করতো কিন্তু তার প্রথম কন্যা সন্তান নাজমা আক্তার নুপুরের জন্ম হওয়ার পর হতে নজরুল ইসলামের মসতিষ্ক ক্রমেই বিকলাঙ্গ হতে থাকে। সংসারের প্রতি তার কোন মায়া মমতা নাই। মানুসিক রোগীতে তিনি পরিণত হন। এদিকে সংসারটি কঠিন অবস্থায় পরিনত হয়। র্পরিবারে উপার্জিত সদস্য না থাকায় সম্প্রতি পরিবারটি দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় জনসাধারণ বলেন, ‘টাকা নিয়ে ক্যান? পাগলার বউ তো এমনিতেই কার্ড পাওয়ার যোগ্য। পাগলার তো কোন প্রতিবন্ধী কার্ডই নাই। তা ছাড়া অন্যকোন আলাদা কার্ডের ভাতাও তিনি পাচ্ছেন না।’
এ বিষয়ে আকলিমা বেগম আবেগী কণ্ঠে জানান, ‘আমার সব কিনা খাইতে অয়। জানি ট্যাহা ছাড়া কার্ড আমার অইবো না।
সামনে বৃষ্টি বর্ষা আইতাছে। আমি ট্যাহা পামু কই ?শ্বশুরের ওয়ারিশ হিসাবে পাওয়া একটু জমি আছিলো তাও কয়ডা ট্যাহায় বেইচ্চা ফালাই, আমার ঘর ঠিক করার লাইগা। এই কয়ডা ট্যাহায় ঘরই ঠিক করমু, কাপড়-চোপড়, না চাল ডাল কিনা খামু, পোলাইপান পড়াশোনা করামু? মা ঢাকায় বুয়ার কাম কইরা আমারে দৈনন্দিন বাজারের খরচ দেয়। অহন বয়স হওয়ায় সে কাম করতে পারে না, এইডার জন্য টাকা পাঠাইতেও পারে না। জমি বেচার দুইডা ট্যাহা থিকা জামাল কার্ড কইরা দিবো কইয়া ০৬(ছয়) হাজার ট্যাহা চাইছে। আমি দুই মাস আগেই তারে ট্যাহা দিছি।
কিন্তু অহন হুনলাম আমার কার্ড অয় নাই। আমার ছোট দুধের বাচ্চা, স্কুলে পড়ুয়া দুই মেয়ে নিয়ে কিভাবে আমার দিন যাবো? মেয়ে দুটির স্কুলের খরচও দিতে হয়। আমি দিশেহারা হইছি। আমার ঘর দিয়া পানি পড়ে। ঘরও ঠিক করন লাগবো মেয়ের বিয়্যাও দেওন লাগবো। তরকারির চিন্তা করিনা, পরিষদ থিকা দুইডা চাল পাইলি কত উপকার অইলো নি।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেতা মোঃ জামাল হোসেন জানান, ‘মনে হয় তার কার্ড অইবো না। ট্যাকা ফেরত পাবো।’’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি মেম্বার জনাবা মাজেদা বেগমের কাছে, মোছাঃ আকলিমা বেগম কার্ড পাওয়ার যোগ্য কিনা, কেন কার্ড পায় নাই- জানতে চাইলে তিনি জানান,
‘‘যোগ্য অইলি কি ওবো আমার ক্ষমতা নাই তাই দিয়া হারি নাই। জামাল টেহা নিছে কার্ড কইরা দেইক। তার কার্ড তো ঠিকি অয়’’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মকবুল হোসেন জানান,
‘‘কার্ড পাইছি সাতটা এর মধ্যে তিনটা দলীয় আছে। কয়জনরে দিমু। ওবা যোগ্য মেলা আছে। জামালরে ট্যাহা দিছে জামালরে ধর। দলীয় কার্ড কারডা কুনু ডুকাইছে কেরা জানে? তুই আমার কাছে অভিযোগ করস ক্যা’’
৫নং অলোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব রহিজ উদ্দিন আকন্দ কালের ধারা ২৪ এর প্রতিনিধি কে জানান, ‘‘ ইয়া আল্লাহ কয় কি! এমপি, উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান, দলীয় নেতারা কার্ড ভাগ করে নেন। তারপর আসে মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে। জামাল কারে টেকা দিছে, কোন মেম্বারকে দিছে কবার কন।’’
আরো জানতে এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ শহীদুজ্জামান মাহমুদ জানান, ভিজিডি কার্ড দেওয়ার ক্ষমতা নারী ও কল্যাণ অফিসের তাদের কাছে যান। যদি ওনার স্বামী নজরুল ইসলাম মাসুনিক প্রতিবন্ধী হন তবে তাকে এখান হতে আবেদন করে ডাক্তারী পরিক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়া যেতে পারে। আমি ওনার তথ্য আমার মোবাইলে সেভ করে রাখছি সময় হলে আমি লোক মারফত তদন্ত করার জন্য পাঠাবো’’
এবিষয়ে নারী ও শিশু কল্যাণ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য গেলেও তাকে দপ্তরে পাওয়া যায় নি।
বিশিষ্ট সমাজসেবকগণ ও সমাজের কর্ণধারগণ মনে করেন, কোন এক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রারমান উন্নত না করা যেতে পারলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন বা সাফল্য অর্জন সম্ভব না। যদি ও সরকার রাস্তাঘাট বা শিল্পকারখানা বা বিশেষ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে বধ্যপরিকর। তবে এটি যুগান্তকারি ও সময়োপযোগী খুব ভালো পদক্ষেপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভালো পরিকল্পনা। তবে ইয়াতিম, অসহায় বৃদ্ধ, মহিলা বা উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তি, ভিক্ষুক ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেমন অত্যন্ত জরুরী। ঠিক তেমনি তাদের জন্য নেওয়া পদক্ষেপের স্বরুপ কার্যপরিধি, ফলোয়াপ বা জীবন যাত্রারমান কতটুকু উন্নত হলো তার রিপোর্ট সরকারিভাবে পর্যালোচনা করা সমীচিন।
এতে সমাজের বাস্তব চিত্র পরিলক্ষিত হতে পারে বলে মনে করা হয়।