টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনে অনিয়ম, হয়রানি, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ
- প্রকাশিত : ০৭:৪১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ ৮৭৯ বার পঠিত
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনে অনিয়ম, হয়রানি, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ
স্টাফ রির্পোটারঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভোগান্তির অন্যতম নাম যেন জন্মনিবন্ধন। বর্তমানে এর দুর্দশা দেখে মনে হয় এ যেন মরণ নিবন্ধন। চলছে সীমাহীন জনদুর্ভোগ ও হয়রানি। একটি জন্মসনদ করতে পিতা, মাতা, দাদ-দাদী, নানা-নানীসহ পুরাতন জন্মসনদ, ভোটার আইডি কার্ড যা সংগ্রহ করা সেবা প্রার্থীর নিকট এক আরেক ধরণের ভোগান্তির কাজ। এছাড়াও হালসনের ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ তোলার ক্ষেত্রে আরেক ভোগান্তির কাজ। সচিব মহোদয় ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ সচিবের সহকারির নিকট পাঠালে সেখানে সহকারি তার কাজ আগে মানে জন্মনিবন্ধনের কাজ (আবেদন গ্রহণ) যে নাগাদ শেষ না হবে সে নাগাদ তার নিকট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার দাম্ভিক আচরণে ক্ষুব্ধ সেবা প্রার্থীরা।
যে, জন্মনিবন্ধন কোন এক সময় বাড়ি বাড়ি মেম্বারগণ দিয়ে যেতেন তা যেন আজ আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে। ছবি, ফটোকপি, জন্মসনদের জন্য পরিষদে ২০০/-, ডাক্তারী সার্টিফিকেটের জন্য ৩০০-৫০০/-, ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ নিতে ১০০-২০০/- টাকাসহ সীমাহীন ভোগান্তি উপেক্ষা করে একটি কাগজের জন্য প্রায় ১০০০/১২০০ টাকা খরচের মাধ্যমে যেটি পাওয়া যায় তার নামই জন্মসনদ।
এদিকে জন্মনিবন্ধনে সরকারি ফি এর অতিরিক্ত টাকা নিলে সচিব, মেম্বার, গ্রাম পুলিশের চাকুরী থাকবে না এবং সরাসরি রেজিষ্টার মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট বিডি.আর.আই.এসতে জন্মসনদ সংশোধন, নতুন, আবেদন, পুর্ণমুদ্রণসহ বিভিন্ন লিংক দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছে।
কিন্তু গ্রাম্য মানুষ অধিকাংশ অশিক্ষিত হওয়ায় তারা এন্ড্রেয়েড ফোন বা যেকোন দোকানে স্বপ্ল খরচে আবেদন করা যায় এটি জানে না। একটি আবেদন করতে সর্বোচ্চ ৩০-৫০ টাকা খরচ হয় এবং সরকারি খরচ মিলিয়ে ১০০/- বা ১২০/- টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। কিন্তু একটি আবেদনে ১০০/- এবং সনদ গ্রহণ করতে ১০০/- টাকাসহ মোট ২০০/- টাকা লাগে। ডাক্তারী সার্টিফিকেট লাগলে তা প্রায় হাজার টাকায় পরিণিত হয়।
অন্যদিকে সার্ভার সমস্যার নাম করে দুই/আড়াই মাস সময় হয়রানি করে ঘুরাচ্ছে পরিষদের উদ্যোক্তা আজিজুর রহমান, সচিবের সহকারি রেজাউল করিম। আরো রয়েছে নব্য করা জন্মসনদের ভূল করার অভিযোগ।
এছাড়াও বাইরে থেকে কোন সাটিফিকেটের আবেদন নিয়ে গেলে সেবা প্রার্থীদের অপমান, অবজ্ঞা করে কথা বলেন। তিনি চান বাহিরে থেকে মানে দোকান বা এন্ড্রোয়েড ফোন থেকে কেউ আবেদন না করুক যাতে সে ১০০/- টাকা করে নিয়ে আবেদন করতে পারে। দিনে ২০ টা কাজ ধরলে ২০০০/- টাকা তার আয়। কাজেই কেন সে বাইরের কাজের সেবা প্রার্থীদের কাজ করে দিয়ে সময় নষ্ট করবে।
সরকারি নিয়ম না মেনে সেবা প্রার্থীদের সেবা বঞ্চিত করে অফিসে বসে প্রতিটি আবেদন ১০০/- টাকা, সনদের জন্য ১০০/- করে নিয়ে জন্মসনদ দেওয়া সরকারের কোন আইনে পড়ে তা বোধগম্য নয়।
জন্মনিবন্ধন বাংলা-ইংলিশ ভার্সন চালু হওয়ার পর থেকে যে পরিমাণ জন্মসনদ করতে হয়েছে এতে উদ্যোক্তা ও সহকারি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে কিনা বা টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে তা জনমনে সংশয় খেকে যায়।
ব্যবসায়ী ও কালের ধারার ২৪’এর প্রতিনিধি জানান, আমি দীর্ঘ ৭ বছর যাবত ছাত্রকাল থেকেই এখানে ব্যবসা করতেছি। যার ফলে ইউনিয়নের কমবেশি প্রত্যেক ওয়ার্ডের লোক আমাকে চিনে। ঘুরাফেরা যাতে না করা লাগে সে জন্য স্থানীয় হওয়ার অনেকে নিবন্ধনের কাজ আমার কাছে ফেলে রেখে যায়। আমি তাদেরকে আবেদন করে সচিব মহোদয়ের নিকট পাঠালে বলেন আপনি নিয়ে আসবেন। আমি নিয়ে গেলে সার্ভার নাই। আজ না কাল, সার্ভার আসুক বলে ঘুরান। সামান্য ভদ্রতা ও শিষ্টাচার কী তা বোধগম্য না।
এদিকে গত ২৭/০১/২০২২ ইং বৃহস্পতিবার বিকাল ৩.৪৫ এর দিকে পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের আকালু গ্রামের লিলি ও সুফিয়া বেগম নামক ভদ্র মহিলা জন্মসনদের ম্যাপিং(সদ্য করা পিতা-মাতার সাথে বাচ্চার জন্মসনদ তথ্য হালনাগাদ করা যা সচিবের কম্পিউটার ব্যতিত কেউ করতে পারবে না। এটি তার করনীয় কাজ) করার জন্য সচিবের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে রেজাউল ম্যপিং করতে ছিলেন । তিনটি হওয়ার পর একটি তার হয় নি এবং সেটির অজুহাতে ম্যাপিং হচ্ছে না বলেন উঠে তার কক্ষে যান। এদিকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তার কক্ষে ভদ্র মহিলা দুজন গেলে তিনি দাম্ভিক ভাষায় বলেন আপনাদেরকে কে বসে থাকতে বলছে। কাজ দোকানে বা যেখানে দিছেন সেখানে নিয়ে যান।
সুফিয়া নামক ভদ্রমহিলা বলেন, ‘এরা তো কামাই করতাছে। গ্রামের পোলা দোকনে কাজ করে দু টাকা যদি পরিশ্রম করে নেয় সমস্যা কী? আবেদন আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তাই বলে আপনি অফিসের অফিস সহায়ক হয়ে কাজ করে দিবে না। না ইইলে দোকনে কিকইরা(কেন) আবেদন করে, সরকার সুযোগ করে দিছে কইরাইতো করে।’
এ ব্যাপারে জানতে, ‘কালের ধারা ২৪’এর প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হলে অফিস সহকারি মেজাজ গরম দেখান ও তার উপর ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে ফুটেজ নিতে গেলে তার হাত থেকে ক্যামেরা ভাঙ্গচুর করার উদ্দেশ্যে গ্রাম্য পুলিশ হাসমত আলী কেড়ে নেন। পরে সন্ধ্যায় সেখান থেকে তারা প্রস্থান হন।
এ বিষয়েঃ সচিব মাহাবুবুর রহমান সুজন জানান, ‘বাইরের আবেদন বন্ধ করতাছি। আপনি ছবি নিবেন কেন?’ এর আগে তিনি ইউনিয়নের আমুলা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান নামক এক মুরুব্বিকে ঐ একই কথা বলেন বাহিরে কাজ দেন কেন?
এছাড়াও তাহার অনিয়মিত অফিস, সার্ভার ইস্যু, সেবা প্রার্থী অফিসে বসলে অতিষ্ঠ, অসস্থিরতা- অস্বস্তিবোধ, বিব্রতবোধ, কাজ করতে অনীহা দেখান।
এ ব্যাপারে ৫নং অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রহিজ উদ্দিন আকন্দ এর সাথে ফোনে যোগযোগ করার চেষ্ট করা হলেও অনিবার্য কারণে তা সম্ভব হয় নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করা এবং ডিজিটালাইড এর সকল সরকারি বেসরকারি সেবার সুবিধা হাতে হাতে পৌছেঁ দিতে নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই ফল স্বরুপ দোকানে বা হাতের কাছে থাকা এন্ড্রোয়েড ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সকল সদস্যের জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। অচিরেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধও হাতের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিশোধের কাজ তার, জন্য অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি চলছে। এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ।
কিন্তু কতিপয় কিছু নাম, পদধারী কর্মকর্তা, কর্মচারীর দাপট, দুর্নীতি, সরকারি নিয়মবর্হিভূত কাজ যা সরকারের কর্মপরিকল্পনা ও উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ জরুরী।
এ ব্যাপারে সরকারি সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি, বা অনিয়ম, কর্মকর্তার প্রদানকৃত সেবার মান যাচাইয়ের জন্য জাতীয় হেল্পডেস্ক চালু , পর্যবেক্ষনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো এবং জনবল নিয়োগ করে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা থাকলেই জনগণ সরকারি সেবা পেতে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ হয়ে কাঙ্খিত সেবা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজন।